মুক্তিযুদ্ধে খেতাব প্রাপ্ত সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ
|
||||||||||
|
||||||||||
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের জন্য নির্দিষ্ট সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় উপাধি বীরশ্রেষ্ঠ। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকারি গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাতজন বীর সন্তানকে মরণোত্তর বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
»» বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল তিনি ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল আখাউড়ার দক্ষিণে গঙ্গাসাগরের উত্তরে দরুইন গ্রামে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর অভিযান প্রতিহত করতে গিয়ে শহীদ হন। তিনি সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন।
»» বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হবার পর দেশে মুক্তিযুদ্ধাদের বিমান সমর্থন দেবার চিন্তা করতে থাকেন এবং সুযোগ বুঝে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর মৌরিপুর মসরুর ঘাঁটি থেকে একটি টি-৩৩ জঙ্গী বিমান নিয়ে পালিয়ে আসার সময় সহযাত্রী রশিদ মিনহাজের সাথে ধস্তাধস্তির সময় সিন্ধু প্রদেশের মরু অঞ্চলে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে ভারত সীমান্তবর্তী বিন্দা গ্রামের থাট্টায় শহীদ হন। মুক্তিবাহিনীর বিমান বহর গড়ার তাঁর সাধ অপূর্ণ থেকে যায়। তিনি বাংলাদেশের বিমান বাহিনীর সদস্য ছিলেন। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবর ছিল পাকিস্তানের করাচি মাসরুর বিমান ঘাঁটিতে। ২৪ জুন, ২০০৬ তারিখে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবর (মৃতদেহ) বাংলাদেশে আনা হয়।
»» বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান ১৯৭১ সালের ২ অক্টোবর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। যুদ্ধ শুরু হলে একদিনের জন্য তিনি মায়ের সাথে দেখা করতে আসেন। ফিরে গিয়ে ৪নং সেক্টরে মৌলভীবাজারস্থ কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের ধলই সীমান্তে যুদ্ধ করেন এবং পাক হানাদার বাহিনীর সাথে বীরত্বের সাথে লড়াই করে শহীদ হন। তিনি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কবর ভারতের আমবাসা এলাকায় থেকে ১০ ডিসেম্বর, ২০০৭ তারিখ বাংলাদেশে আনা হয়।
»» বীরশ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন বিএনএস পদ্মায় মুক্তিবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধকালীন ভুলক্রমে ভারতীয় বিমান বাহিনীর গুলির মুখে পড়েন। গুলির কারণে জাহাজে আগুন ধরে জাহাজের গোলাবারুদ ফুটতে শুরু করলে তিনি নদীতে ঝাঁপ দেন। উপকূল এলাকায় পরে রাজাকারদের হাতে বুলেটবিদ্ধ হন এবং ধরা পড়েন। রাজাকারদের অমানুষিক নির্যাতনে শহীদ হন। তিনি নৌ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। তাঁকে রূপসা উপজেলায় রূপসা বাসস্ট্যান্ডের পাশে নদীর তীরে সমাহিত করা হয়।
»» বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে চাঁপাই নবাবগঞ্জে সাত নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন। পাকবাহিনী বেগতিক দেখে পিছু হঠতে থাকে এবং মুক্তিবাহিনী পলায়নরত পাক বাহিনীকে ধাওয়া করে। আত্মরক্ষার্থে পাল্টা আক্রমণ চালালে পাকবাহিনীর একটি বুলেট কপালে বিদ্ধ হলে তিনি শহীদ হন। ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে সাত নম্বর সেক্টরে সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
»» বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রব রাঙামাটি ও মহালছড়ির সংযোগপথ নানিয়ারচার উপজেলার বুড়িমারী এলাকায় চিংড়ি খালের দু'পাশে নির্মিত প্রতিরক্ষা ব্যূহ অক্ষুণ্ণ রাখতে গিয়ে হানাদার বাহিনীর সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধে মর্টারের আঘাতে শাহাদাৎ বরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস এর সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি ১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। তাঁর কবর রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে। ১৯৯৬ সালে দয়াল চন্দ্র চাকমা নামে এক আদিবাসী এটি শনাক্ত করেন।
»» বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মুহম্মদ ৮ নম্বর সেক্টরে স্থায়ী টহলে নিয়োজিত থাকার সময় যশোরের গোয়ালহাঁটি এলাকায় ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে পড়েন। সঙ্গীদের বাঁচাতে গিয়ে একাকী পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সঙ্গীদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন এবং হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস সদস্য ছিলেন। তাঁকে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।
|
||||||||||
Copyright © Sabyasachi Bairagi |